Other

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা, বক্তব্য, পরামর্শ ও চিঠি

সন্তান লালন পালনে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা, আদেশ, সাজেশন ও পরামর্শ মূলক আর্টিকেলটি সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দের সুসন্তান গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদী। 

অভিভাবক নিয়ে উক্তি

অভিভাবক আমাদের জীবনের সুন্দর পরিবর্তন গড়ার নক্ষত্র স্বরূপ, তাদের অপলক্ষ ভালোবাসা এবং জ্ঞানের আলোকে পথপ্রদর্শন করতে বেশ ভূমিকা রাখে।

অভিভাবক হিসেবে মাতা পিতাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও যত্নশীলতা আমাদেরকে দুরন্ত হতে সাহায্য করে, এবং আমাদের  স্বপ্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণভাবে সহায়তা করে।

আদর্শ অভিভাবকের ভালোবাসা একটি স্থির ভিত্তির মত, যা মহাসমুদ্রের তুফানি বিপদের সময় আমাদের জীবনকে স্থির রাখে।

অভিভাবক হিসেবে একজন মায়ের শিক্ষা অধ্যয়ন পাঠের বাইরে আর কোন তুলনা হয় না, তার মৌলিক মর্যাদা আমাদের চরিত্রের ভিত্তি ঘটতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

অভিভাবকরা যদি বন্ধুসুলভ হয়, তাহলে সন্তানেরা তাদের যত্নের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে আলিঙ্গন করে এবং নিজেদের প্রবল ইচ্ছা ও স্বপ্নের কথা অনায়াসে বলতে পারে। 

“অভিভাবক হিসেবে মাতা-পিতাদের সংঘাত সময়ে অবস্তুত থাকে, তবে তাদের প্রভাব আমাদের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রতিধ্বনিত হয়।”

একজন আদর্শ অভিভাবক, সন্তানের প্রতি বিশ্বাস এবং তার নিজস্ব আত্মবিশ্বাসের পরিচালক হিসেবে ভূমিকা রাখে। এবং জীবনের সফল হওয়ার জন্য ভালো কাজ করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। 

একজন অভিভাবক সন্তানের পাশে থেকে, সুসন্তান হিসেবে দৃঢ়ভাবে ঘরে তুলতে অপরিমিত ভালোবাসার শক্তির যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে থাকে।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা

সন্তানকে সব সময় শাসন করবেন না, মাঝেমধ্যে আদরও করবেন। তবে আদর ও যত্নের মাত্রা যাতে করে পরিমাণ মতো থাকে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

 সন্তান সবসময় বায়না ধরলে, তার কিছুটা পূরণ করুন বাকিটুকু রেখে দিন। যদি আপনি চাওয়া মাত্রই তাকে সবকিছুই নির্দ্বিধায় দিয়ে দেন, তাহলে যখন আপনার খারাপ সময়ে আসবে তখন সন্তানকে তার বায়না করা জিনিস না দিতে পারলে তার কাছে আপনি খারাপ হয়ে যাবেন।

 রাগের মাথায় সন্তানকে কখনোই জোরে আঘাত করবেন না, এতে করে সে আপনার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।

 সন্তান যদি কোন বেয়াদবি করে তখন তার জন্য তাকে শাসন না করে বরং ধৈর্য ধারণ করুন, এবং একটি ভালো সময়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে তার অপরাধ ও বেয়াদবির কাজটুকু বুঝিয়ে দিন। এবং তাকে বুঝান যে আপনার সাথে করা কৃত ব্যবহার তার মোটেও উচিত হয়নি।

সন্তানসন্তান যখন স্বাধীন চেতা বয়সে পদার্পণ করবে, তখন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামান্য ঘুরতে যাওয়া ও আড্ডাবাজিতে নিষেধ করবেন না। বরং সে কার সঙ্গে চলছে কাদের সাথে উঠাবস করছে সেদিকে খেয়াল রেখে খারাপ মানুষদের থেকে তাকে সতর্ক করুন। এতে করে আপনার সন্তান একজন আদর্শিক সামাজিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

কথায় কথায় সন্তানকে গালিগালাজ করবেন না, অথবা তার সামনেও অন্য কাউকে গালি দিবেন না। তাহলে আপনার সন্তানও এটি শিখে ফেলবে এবং পরবর্তীতে তা অন্যদের উপর প্রয়োগ করবে। কিন্তু একজন বাবা মা হিসেবে বা অভিভাবক হিসেবে এটি আপনি ভবিষ্যতে তার জন্য কখনোই আশা করবেন না, তাই আগে থেকেই সতর্ক হওয়া ভালো।

আদর্শ অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব সন্তানকে সু সন্তানে মানুষের মতো মানুষ রূপে গড়ে তুলতে সর্বপ্রথম তাকে ধর্মীয় শিক্ষা দিন। কারণ ধর্মীয় অনুশাসন ও ধার্মিক শিক্ষার ফলে সন্তানের ভিতর ন্যায়পরায়ণতা, সত্যবাদিতা, উদারতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ গুলি প্রভাব ফেলবে; যার ফলে আপনার সন্তান একজন সুসন্তান ও সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। 

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে চিঠি

আমার প্রিয় পিতামাতার কাছে,

আমার জীবনের যাত্রা জুড়ে আমার শক্তির স্তম্ভ এবং অটল সমর্থন হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার ভালবাসা, নির্দেশিকা এবং ত্যাগ আমাকে আজ আমি যে ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। আপনি আমাকে যে জীবনের পাঠ শিখিয়েছেন এবং আপনি আমাকে যে অফুরন্ত ভালবাসা দিয়েছেন তার জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ।

আমার জীবনে আপনার উপস্থিতি পরিমাপের বাইরে একটি আশীর্বাদ, এবং আমরা একসাথে ভাগ করে নেওয়া প্রতিটি মুহূর্তকে আমি লালন করি। আপনি আমাকে নিঃশর্ত ভালবাসার উপহার দিয়েছেন, এবং আমি আপনাকে সর্বদা আমার হৃদয়ে কাছে রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

আপনার উপস্থিতি একটি সান্ত্বনাদায়ক আলিঙ্গন যা যেকোনো চ্যালেঞ্জকে জয়ী মনে করে এবং যেকোনো আনন্দকে আরও অর্থবহ করে তোলে। আপনার নিঃস্বার্থতা এবং উত্সর্গ আমাকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করে, এবং আমি আপনাকে আমার পিতামাতা বলে আশীর্বাদ পেয়েছি।

ইতি –

আমার সমস্ত ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা সহ,

[তোমার নাম]

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষকের বক্তব্য

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা

উপস্থিত সম্মানিত সুধী ও অভিভাবক বৃন্দ!

 সকলের প্রতি আমার সালাম, আদাব ও কৃতজ্ঞতা রইল। আজকের এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হল অভিভাবকদের জন্য, সন্তানকে কিভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায় এবং মানুষের মত মানুষ রূপে করা যায় সে উদ্দেশ্য পরামর্শ সেমিনার করা।

মনে রাখবেন শিক্ষায় জাতির কান্ডারী! তবে সন্তানের জন্য সর্বপ্রথম শিক্ষক হলো তার অভিভাবক বা পিতা-মাতা। আমরা শিক্ষক হিসেবে শুধুমাত্র তাকে কয়েক ঘন্টার জন্য পাঠদান ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে পারি, কিন্তু সন্তান যেহেতু সর্বদা পিতামাতা ও অভিভাবকের সঙ্গেই বসবাস করে; সুতরাং তাকে পরিপূর্ণভাবে গঠন করার সুযোগ ও প্রয়াস চালানো বাবা-মা ও অভিভাবক এর জন্য একান্ত কর্তব্য।

শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা

শুধুমাত্র পরীক্ষার আগে সন্তানকে পড়াশোনার জন্য তাগাদা না দিয়ে বরং প্রতিদিনই যাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়, অভিভাবকদের প্রতি এই বিষয়টিতে বিশেষভাবে নজর রাখার জন্য অনুরোধ করছি।

আপনার সন্তান আমাদের শিক্ষার্থী হিসেবে কাদের সঙ্গে চলাফেরা করছে, কোথায় যাচ্ছে এবং কি করছে। সে বিষয়ে ২৪ ঘন্টা নজরদারি করা সম্ভব নহে। তবে বাবা-মার সংস্পর্শে ও নজরদারিতে থাকলে সন্তান নেতিবাচক মানুষদের সাথে চলাফেরা এড়িয়ে চলতে পারবে।

যদিও শিক্ষা মানুষকে ন্যায়পরায়ন ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সাহায্য করে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গোপনে ও লোক চক্ষুর আড়ালে মাদকের প্রতি একশ্রেণীর অসাধু মানুষেরা শিক্ষার্থীদেরকে অন্ধকার পথ দেখাচ্ছে। সুতরাং আমাদের শিক্ষক মন্ডলীর পক্ষ থেকে আপনার সন্তানের দায়িত্ব ও যত্ন নেওয়া যেমনিভাবে আমাদের কর্তব্য, তেমনিভাবে সমান হারে অভিভাবক হিসেবে আপনাদের ও একান্ত ও বাধ্যতো দায়িত্ব রয়েছে।

অভিভাবকদের করণীয়

সন্তানকে কখনো মেরে বা বকা দিয়ে শিখাতে যাবেন না। আমরা অনেক অভিভাবক কি এই ভুলটুকু করে থাকি, শিশুরা সাধারণত অন্যান্য কাজের চাইতে খেলাধুলা করতেই বেশি পছন্দ করে। তো অনেক সময় পড়াশোনা করতে না চাইলে আমরা তাদেরকে জোর করে বকা দিয়ে বা মারধর করে পড়তে বসায়, অথবা কোন একটি বিষয় না বুঝলে বা তার মাথা অন্য কিছু ঘুরপাক খেলে যখন সে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বুঝানোর চেষ্টা কে না বুঝতে পারে তখন আমরা তাকে মারধর করি বা তার প্রতি মেজাজ গরম দেখায়। উচ্চস্বরে শিশুর সাথে তখন আমরা কথা বলতে অভ্যস্ত! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আপনার শিশুকে পড়াশুনার প্রতি আরো বেশি ও মনোযোগী হয়ে যেতে এবং একটি অতিরিক্ত প্রেসার মানসিকভাবে ঘূর্ণায়মান হতে বিপরীত ভূমিকা রাখে।

আমরা প্রায়ই অনেকেই শিশু সন্তানকে পড়াশোনার সময় সে যখন একটা বিষয়ে বুঝে উঠতে পারেনা তখন তীব্র সমালোচনা করে থাকি, অনেক ক্ষেত্রে তো অন্যের সাথে তুলনা করেই ফেলি এবং শিশুর আত্মসম্মান বোধে আঘাত করি নিজেদের অজান্তেই। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে আমরা অভিভাবকরা নিজেরাই আমাদের সন্তানদেরকে অনেক অংশেই পড়াশোনা থেকে অমনোযোগী হওয়ার পিছনে দায়ী।

 কারণ যখন সারাদিন শেষে সন্ধ্যা বেলায় একজন শিশুকে পড়ার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়, তখন সে পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে গালিগালাজ খাওয়া, তীব্র সমালোচনা সোনা এবং আঘাত জনিত বকাঝকার কারণে সে পড়াশোনার প্রতি ও মনোযোগিতা ও খেয়ালী পরিকল্পনা করতে শুরু করে। 

সুতরাং বাড়ন্ত বয়সে শিশু ও সন্তানদেরকে লেখাপড়ার প্রতি সহজলভ্য ও আনন্দসহের মজাদার করতে অভ্যস্ত হন। এবং বিভিন্ন রকমের কৌশলে সন্তান যেটা চায় সেই পদ্ধতিতেই লেখাপড়ার প্রতি তাকে মনোযোগী হতে চেষ্টা করুন।

 অবশেষে, আমাদের এই অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা ও পরামর্শ গুলোর মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখার জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি। মনে রাখবেন: হ্যাপি ফ্যামিলি, হ্যাপি লাইফ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button