খারাপ সময় নিয়ে উক্তি, কিছু কথা ও ইসলামিক উপদেশ (Kharap Somoy Niye Ukti)
মানুষের সুসময় ও দুঃসময় চিরজীবন স্থায়ী থাকে না। এই পর্বে খারাপ সময় নিয়ে উক্তি করব, যা থেকে বুঝতে পারবেন মানুষের খারাপ সময় সারা জীবন থাকে না। সেই সাথে খারাপ সময়ে কেউ পাশে থাকে না, ইসলামিক উক্তি ও মূল্যবান উপদেশমালা জানতে চাইলে নিচে থেকে পড়ুন।
পানিতে না নামলে যেমন সাঁতার শেখা যায় না; ঠিক একইভাবে জীবনে খারাপ সময় না আসলে, প্রকৃত মানুষ চেনা যায় না।
সম্পর্ক তার সাথেই করা উচিত, যে তোমার গুরুত্ব বুঝবে। সময় তাকেই দেওয়া উচিত, যে সব সময় সময়ের মূল্য বোঝে।
খারাপ সময় নিয়ে উক্তি
মূলত খারাপ সময় আপনার জীবনের জন্য এমন একটি আয়না স্বরূপ; যা আপনাকে অন্যের আসল চেহারা দেখিয়ে দিবে। আর ভালো ও সুসময় গুলো বৃষ্টির মত, যা সূর্যের গরম উত্তাপ কেও আটকে দিবে।
শুধু একটু অপেক্ষা কর বন্ধু! দেখবে সময় বলে দিবে তুমি কার হবে, আর কে তোমার হবে।
বৃষ্টি না এলে যেমন বুঝা যায় না ছাতার কোন কোন জায়গায় ছিদ্র আছে; তেমনি জীবনে খারাপ সময় না আসলে বুঝা যায় না কার মনে কি রয়েছে। এবং কে আপনাকে কিভাবে দেখছে।
মনে রাখবেন সময় কখনো দেখা যায় না, তবে পরিস্থিতির উছিলায় হলেও সময় আপনাকে অনেক কিছু দেখিয়ে দিবে। অনেক কিছু শিখিয়ে যাবে। আর খারাপ সময় গুলো মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে যায়।
জীবনে খারাপ সময় আসাটা দরকার; কারণ খারাপ সময় না আসলে কখনো মুখোশ পরা বেইমান ও স্বার্থপর মানুষগুলোকে চেনা যায় না।
সময় এমন এক মূল্যবান বস্তু, যা একবার হারিয়ে গেলে দ্বিতীয় বার ফেরত আসে না। তাই সময়ের মূল্যায়ন করতে শিখো বন্ধু।
তোমার দুঃখের সময় যারা পাশে থাকবে; তাদেরকে সব সময় মনে রেখো। আর যারা দুর্ব্যবহার করবে তাদেরকে জীবন থেকে ছিটকে ফেলে দাও। কারণ যে তোমার দুঃসময় পাশে থাকল না, সে শুধু তোমার সুসসময়ের সুখগুলোকে ভাগ করে নেওয়ার যোগ্যতাই রাখেনা।
এখন আমি আর সেই মানুষটা নেই, যাকে তুমি চিনতে। বরং পরিস্থিতির কারণে নিজেকে বদলে ফেলেছি। সময়ের ব্যবধানে বদলে ফেলেছি নিজের পৃথিবী, পছন্দ ও ভালোবাসার মানুষগুলোকে। এখন আর তোমার কথা মনে করে ফালতু সময় নষ্ট করতে চাই না, ধিক্কার জানাই তোমার ফিরে আসাকে। কখনোই আশা করি না তোমার প্রত্যাবর্তনকে।
খারাপ সময় নিয়ে ইসলামিক উক্তি
দুঃসময়ে শুধু মাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। ধৈর্য ধারণ করো। কারণ স্বয়ং কোরআনে বর্ণিত আছে: ইন্নাল্লাহা মায়াস সাবিরীন, অর্থাৎ নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের সাথে আল্লাহ আছেন।
দুঃসময়ে হতাশ না হয়ে বরং ধৈর্য ধারণ করুন। কারণ আল্লাহ তা’আলার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই আমাদের চিন্তার চেয়েও অধিক মহান।
এমন কিছু দুঃখের মুহূর্ত আমাদের জীবনে আসে, যখন সবকিছু দুর্বিষহ লাগে। কিন্তু যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে, তারা দিনশেষে দুঃসময় কাটিয়ে সুসময়ের দিকে ফিরে যায়।
আল্লাহ তাআলা আপনাকে ছোটখাটো সাময়িক পরীক্ষায় ফেলে পরাজয় দিলেন; তার মানে এই না যে তিনি আপনাকে ভালোবাসেন না। বরং এটাও হতে পারে যে, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে এর চাইতেও অধিক মর্যাদা দান করবেন। মনে রাখবেন নিশ্চয়ই কষ্টের পরে আসে স্বস্তি…।
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে, তাঁরই অবাধ্যতা করে কখনোই শান্তি কামনা করবেন না। মনে রাখবেন সুসময় গুলো আল্লাহর দেয়া নেয়ামত! আর দুঃসময় গুরু আল্লাহর দেওয়া ধৈর্যের পরীক্ষা।
সব সময় একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে চলুন। দেখবেন শেষ হাসিটা আপনি হাসবেন।
জীবনের দুঃসময়ে ভেঙ্গে পড়বেন না। কারণ আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারায় বলেছেন: কখনো বিপদের আতঙ্ক, কখনো আবার কস ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, ধন-সম্পদ কিংবা অন্য ফল ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে তোমাদেরকে মাঝেমধ্যে অবশ্যই পরীক্ষায় ফেলব।। মনে রাখবেন বন্ধু: পৃথিবীতে আমরা এসেছি পরীক্ষা দিতে, এটাই সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। যা আপনাকে মেনে নিতেই হবে।
কষ্টের গান, হিন্দি সিরিয়াল বা বাজে রকমের মাদকাসক্ত আপনাকে কখনোই খারাপ সময় থেকে উদ্ধার করতে পারবেনা। বরং আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করুন, এবং সমস্যার মোকাবেলা করার জন্য চেষ্টা করুন সেই সাথে মহান রবের কাছে দুই হাত তুলে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন এবং তার দয়া চান। দেখবেন আপনার খারাপ সময় গুলো চলে যাবে। আপনি হয়ে উঠবেন নতুন ভাবে একজন সুখী মানুষ।
আমরা অনেকেই নিজেদেরকে প্রতিদিন নানা রকমের বিনোদনের মত্ত রেখেই জীবনের কষ্টগুলো ভুলে থাকার চেষ্টা করি। কখনো মাদক গ্রহণ করে, কখনো সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে, কখনো আবার নিজেকে ছিন্ন ভিন্ন করে।
মনে রাখবেন: যতক্ষণ আপনি বিরোধীনে ডুবে থাকবেন, ঠিক ততক্ষণই জীবনটা আনন্দময় মনে হবে। তারপর বিনোদনের শেষ হয়ে গেলেই: অবসাদ, বিরক্তি এবং একঘেয়েমি নেতা ধীরে ধীরে আপনাকে গ্রাস করে ফেলবে। আপনাকে তীরে ধীরে শেষ করে দিবে। যন্ত্রণায়, অব্যক্ত বেদনায় ধ্বংস হতে থাকবেন।
আর এভাবেই একটা সময় নিজেই আপনার জীবনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবেন। অথবা প্রশ্ন করবেন কেন আমার এটা হল, কেন এমনটা হল না। কেন আমার এটা নেই, কিন্তু ওর কেন আছে??
শুধু আমার বেলায় কেন এরকম হয়? অন্যর বেলায় কেন হয় না?? আর নিজের অজান্তেই এভাবেই অসুস্থ প্রশ্নগুলোকে নিজের বুকে লালন করে মানসিকভাবে অশান্তিতে জলে পড়ে ছারখার হয়ে যাবেন।
আর এত শত অশান্তির মূল কারণ হলো: আমরা যে ক্ষুদ্র পৃথিবীতে মূলত পরীক্ষা দিতে এসেছি, মহান সীমানায় গেঁথে রয়েছে তার এই কঠিন বাস্তবতা টা ভুলে যায়। যেটা কখনোই উচিত নয়।
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে খারাপ সময় ও কঠিন সময়গুলোতে তার প্রতি ভরসা রাখার তৌফিক দান করুন। আমীন।।
খারাপ সময় কেউ পাশে থাকে না
যে মানুষগুলোকে নিজের দুঃসময়েটাতে খুব করে পাশে চাই; কেন যেন সেই মানুষগুলোই আমার দুঃসময় তাতে একটু বেশিই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবুও আল্লাহর কাছে দোয়া চাই যে, দূর থেকে হলেও মানুষগুলো ভালো থাকুক।
যে জিনিসটাকে সবচেয়ে বেশি যত্ন করে রাখতে শিখলাম, সে জিনিসটাই আমার কাছে খুব কম সময়ের জন্য আসলো। হয়তো এটাই আমার বিধিলিপিতে লেখা ছিল।
কারো কাছ থেকে জোর করে সময় পাওয়ার আশা করবেন না; বরং যার ইচ্ছে থাকবে সে শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও আপনার জন্য সময় বের করে নেবে।
একটা জিনিস শিখলাম কি জানেন? জীবনে একা থাকাই শ্রেয়! কারণ জীবনের সব খারাপ সময় গুলো একা একাই পার করতে হয়েছে আমার। দুঃসময়ে কাউকে সেভাবে পাশে পাইনি।
মানুষের খারাপ সময় সারাজীবন থাকে না
কারো খারাপ সময় আসলে তাকে আঘাত করবেন না; বরংচ পারলে সাহায্য করুন। মনে রাখবেন মানুষের খারাপ সময় সারা জীবন থাকে না। সময়ের ব্যবধানে আপনার জীবনেও কোন একদিন খারাপ সময় আসতে পারে।
কারো পছন্দ হওয়াটা যেমন সহজ, সবসময় তার পছন্দের মানুষ হয়ে থাকাটা তার চাইতে হাজারগুণ বেশি কঠিন।
বিশেষভাবে খারাপ সময় নিয়ে উক্তি হলো – সময় কখনো দুঃখ-কষ্টকে ভোলায় না, বরং সুখ-দুঃখকে মানিয়ে নেয়াটা শেখায়।
কারো খারাপ সময় দেখে হাসা উচিত নয়, খুশি হওয়া মানবিক কাজ নয়। কারণ তোমার নিজের খারাপ সময় আসতেও সময় লাগবেনা। মনে রাখবে: মানুষ সারা জীবন সুখী হয়ে থাকতে পারে না, বরং সুখ তারপর দুখ পুনরায় সুখ মানুষের জীবনে চক্রাকারে ঘুরে ফিরে আসে।
আমাদের জীবনে কখনো কখনো এমন সব বন্ধু আসে, যারা খুব অল্প সময় আমাদের ভিতরে অবস্থান করে। কিন্তু তাদের স্মৃতিগুলো সারা জীবন আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়। খারাপ সময়ে হলেও তাদেরকে মনে রেখো।
খারাপ সময় নিয়ে ছোট উক্তি
যেই জুতো জোড়া সবচেয়ে বেশি প্রিয়, সেই জুতা জোড়াই দ্রুত ছিড়ে যায়।
জীবনটা এমন এক পরিস্থিতি গিয়ে থেমেছে: যে জামাটা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি, সেটা হয়তো রং লেগে যাবে না হয় মাংসের ঝোলে নষ্ট হয়ে যাবে। ঠিক আমার পরিচিত মানুষেরা এরকমই হয়ে যাচ্ছে।
এমন এক বিভীষিকাময় সময় পার করছি যে, যে ঘড়িটা পড়লে আমার হাতে টগবগে ফুটে উঠতো। সেই ঘড়িটার ব্যাটারিটায় হয়তো নষ্ট হয়ে যায় নয়তো বেল্ট ছেড়ে যায়।
যেই মানুষটাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, সবসময় যে মানুষটাকে খুব করে খুব কাছে চাই। সেই মানুষটাই হয়তো ছেলে চলে যায় নতুবা থেকেও না থাকার মত রয়ে যায়।
সম্পর্কিত: বিচ্ছেদ নিয়ে উক্তি। সম্পর্ক নষ্ট, অপূর্ণতা নিয়ে বাস্তব কথা (Bicched Niye Ukti)।
প্রতিটা মানুষের জীবনে এমন একজন থাকে, যাকে ছাড়া সে এক মুহূর্ত বেঁচে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারে না।
পরিশেষে, খারাপ সময় নিয়ে উক্তি করতে গিয়ে এতোটুকুই বলবো: আমাদের জীবনের খারাপ সময় গুলো কেটে উঠুক। যদি আপনি এখনো দুঃসময়ের ভোগান্তিতে পতিত হয়ে থাকেন, তাহলে মহান আল্লাহ তা’আলা আপনাকে এই বেদনাদায়ক মুহূর্তগুলোকে কাটিয়ে ওঠার তৌফিক দান করুন। সুখময় নতুন সূর্যের আলো আপনার জীবনে জেগে উঠুক। আপনার প্রতি শুভকামনা রইল। ফিআমানিল্লাহ।।