সত্য কথা বলার সুফল। সত্যবাদিতার সুফল ও উপকারিতা গুলো কি কি?
সত্য বলার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। সত্যবাদীকে সবাই বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। তবে একদিকে যেমন সত্য কথা বলার সুফল রয়েছে, অপরদিকে জীবনে চলতে পথে সর্বদা সত্যভাষীদের জন্য রয়েছে মিথ্যুকদের তৈরি নানা বাধা বিপত্তি। কিন্তু একজন ভালো ও সৎ মানুষ হিসেবে, আমাদের প্রত্যেককেই সত্যের পন্থা অবলম্বন করা উচিত। কেননা দিনশেষে মিথ্যার পরাজয় আর সত্যের জয় হয়।
সত্য কথা বলার সুফল
এই আর্টিকেলে আমি আপনাকে বলব সত্য বলার সুফল দিকগুলো কি কি, কেন আমাদেরকে সর্বদা সত্য কথা বলা উচিত, সত্য কথা বলার পুরস্কার স্বরূপ দুনিয়া এবং আখেরাতে কি পাওয়া যায়। হাদিসের ভাষ্যমতে একজন সত্যভাষীর ইহকালীন ও পরকালীন উপকারিতা কি কি, এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সত্যের পথ অবলম্বন করতে কিরকম গুরুত্ব আরোপ করেছেন, এই সকল বিষয়ে…। চলুন জানা যাক –
সত্যবাদিতার সুফল ও উপকারিতা গুলো কি কি?
সত্যবাদীরা সর্বদা নির্ভীক হয়ে থাকে, মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করে, এবং সর্বোপরি ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতি বৃদ্ধিতে সক্ষম। নিম্নে সত্য কথা বলার প্রধান ১০ টি সুফল উল্লেখ করা হলো:
১. বিশ্বাস তৈরি করে: আপনি যখন সত্য বলতে থাকেন, অন্যদের আপনার ওপর বিশ্বাস করতে সাহায্য করে। বিশ্বাস সামাজিকভাবে যোগাযোগের যোগ্য এবং অর্থপ্রদ করে।
২. আত্মসমর্পণ বাড়াতে সাহায্য করে: সত্য বলা অর্থাৎ আপনি নিজের ক্রিয়া এবং নিষ্কৃতি জানানোতে এবং অন্যদেরকে একে অপরের প্রতি যথার্থতা দেখানোর দায়িত্ব দেওয়া জন্য আগ্রহব্যূহত করে।
৩. স্বার্থপরতা দূর করে: সত্য বলার মাধ্যমে, আপনি অন্যদের মুখোমুখি আপনার ভবিষ্যত এবং স্বার্থপর উদ্দেশ্য সামগ্রীগুলি দেখাতে পারেন।
৪. দায়িত্ববোধ সম্পন্ন করে তোলে: সত্য বলা মানুষের ক্রিয়া এবং প্রণীতি জন্য দায়ী হতে সাহায্য করে। এটি দায়িত্ব এবং দায়িত্ববোধের মতো ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে।
৫. ব্যক্তিগত উন্নতি স্বাধন করে: আপনি যখন সত্য বলবেন, তখন আপনার কৃত ভুল কাজকে বুঝতে পারবেন এবং তা থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিখতে পারবেন। এই স্ব-সচেতনতা ব্যক্তিগত উন্নতি এবং স্ব-মেজাজে বৃদ্ধি করে, নিজেকে একটি ভাল সংস্করণে নিয়ে যায়।
৬. আত্নসম্মান বৃদ্ধি করে: সত্য বলার পথে চলতে চলতে, একটা সময় ঠিকই আপনার নৈতিক চরিত্র এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হবে। এটি আপনার মানবিকতা, সত্যতা এবং ন্যায়পরায়নতার প্রতি দায়িত্বশীলতা বাড়াতে পারে।
৭. বাস্তবতা প্রবৃদ্ধি করে: কোন কিছুর প্রকৃত ঘটনা গোপন করা বা মিথ্যা বলা আপনার জন্য চিন্তা করলে চিন্তামগ্ন, দু: খ, এবং উদ্বেগের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সত্য বলা এই নেতিবাচক আবেগগুলি দূর করে, আপনার ভাবনা স্থিতি এবং মানসিক ভালবাসা বৃদ্ধি করতে পারে।
৮. সমাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি: সমাজ সত্যবাদীকে মূল্যায়ন করা হয় এবং সৎ ব্যক্তিরা সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সবাই তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে এবং ভালোবাসে।
৯. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে: সত্য বলা আপনার মনে রাখতে দায়বদ্ধ করতে পারে না যোগাযোগে অস্বাভাবিক প্রতিস্থাপনার জন্য না অশ্লীল ভাবে।
১০. অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে: সত্য বলা আপনার সুপ্ত উদ্দেশ্যকে সাক্ষরিত করতে সাহায্য করতে পারে, আপনার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যের দিকে আপনাকে আগ্রহী করে তুলার পাশাপাশি যেকোন ভালো উদ্যোগ নিতে উৎসাহ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন: অনুভূতি নিয়ে কিছু কথা, হৃদয়ে জমে থাকা কষ্টের স্মৃতি প্রকাশ
সর্বদা সত্য কথা বলা উচিত কেন?
সব সময় সত্য কথা বলা উচিত, কারণ এটি একজন ব্যক্তিকে নৈতিক দায়িত্ববোধ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সত্যবাদী কে সবাই বিশ্বাস করে এবং একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এছাড়াও যে কোন সুসম্পর্কের জন্য সৎ হওয়া আবশ্যক, অর্থাৎ যেকোনো সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সততা নিজের মধ্যে ধারণ করা প্রয়োজন।
সর্বোপরি আপনার পরিচিত ও আশেপাশের মানুষের কাছে নিজের আত্মমুল্যবোধ ও আত্মশ্রদ্ধা বৃদ্ধি করতেও সর্বদা সত্য কথা বলা উচিত।
সত্য কথা বলা নিয়ে হাদিস
ইসলামে, সত্য কথা বলা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে মানা হয়। হাদিসে শরীফে এই বিষয়ে প্রশাসিত কিছু উদাহরণ দেওয়া হল:
সত্যবাদিতা জান্নাতের দিকে নিয়ে যায় এবং মিথ্যা জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে।” (বুখারি ও মুসলিম)
সত্যবাদী ব্যক্তির জন্য পরকালে জান্নাতের মধ্যে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে, যেখানে শান্তি আর সুখ-সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ। অপরপক্ষে মিথ্যাবাদীর জন্য জাহান্নামের বাড়ি স্থাপন করা হবে, যেখানে শাস্তি আর অশান্তি।” (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি সদা সত্য কথা বলে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি এও বলেছেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেল; আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আস্তাগফিরুল্লাহ!! ( সহিহ মুসলিম শরিফ)।
এছাড়াও সত্য কথা বলা নিয়ে আরও একটি হাদিস রয়েছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমায়েছেন:যখন কোন ব্যক্তি সব সময় সত্য কথায় অভ্যস্ত হলো এবং শক্তির উপর সর্বদা দৃঢ়তা পোষণ করলো, এমন ব্যক্তির নামের সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা “ সিদ্দিক” ( সত্যবাদী) উপাধিটি লিপিবদ্ধ করে দেন। সুবহানাল্লাহ।(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮০৫)
সত্য কথা বললে কি হয়? সত্যবাদিতার গুরুত্ব কী?
সমাজে সার্বজনীন সত্যবাদীতার গুরুত্ব রয়েছে। সব সময় সত্য কথা বললে হৃদয় প্রশান্তি আসে, প্রকৃত মুমিনকে মুনাফিক থেকে পৃথক করার অন্যতম উপায় হলো সত্যবাদী মানুষকে চেনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষ্য মতে, কেয়ামতের দিন সত্যবাদী তথা সিদ্দিকগণ জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
তাছাড়া সৎ ব্যক্তিগণ সর্বদা সৎ পথে এবং পুণ্যের পথে পরিচালিত হয়। যার ফলে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অপরাধ হলো তাদের মাধ্যমে করা সম্ভব হয় না, এতে করে দেশ ও জাতি ব্যক্তিদের কাছে নিরাপদ বোধ করে।
পরিশেষে বলতে চাই, সত্য কথা বলার সুফল হলো – সত্যের চর্চা মানুষকে সিদ্দিকের মর্যাদা দেয়। এবং আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা অনুযায়ী, সিদ্দিকগণ বা সত্যবাদী ব্যক্তি পরকালে চিরস্থায়ী সুখের স্থান জান্নাতে বসবাস করবে। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সত্যবাদী হওয়ার ও সৎ পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।।